ছাত্রজীবনে পার্ট টাইম চাকরি ২০২৩

বর্তমান সময়ে মানুষের কর্মপরিধি পরিবর্তিত হচ্ছে। আমাদের দেশের আগের যেমন চাকরির বাজার ছিল বর্তমানে তেমন চাকরির বাজার আর নেই। চাকরির বাজারের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে এবং মানুষ এখন সকাল 8 টা থেকে বিকাল 5 টা পর্যন্ত অফিস করে না। মানুষ এখন অন্য মাধ্যম দিয়ে খুব অল্প সময়ে বেশি টাকা রোজগার করে থাকে।

বাংলাদেশের অথবা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের বাজারব্যবস্থা পরিবর্তিত হওয়ার সাথে সাথে চাকরির ধরন পাল্টে গিয়েছে এবং নতুন নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। একজন সাধারন মানুষ সাধারণত সকাল আটটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত চাকরি করতে পারে। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে কখনই এই গদবাধা নিয়মে চাকরি করা সম্ভব নয়।

একজন শিক্ষার্থীর জীবনে যেমন আর্থিক নিরাপত্তার প্রয়োজন তেমনি সময় বাঁচিয়ে তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়াটা ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সে ক্ষেত্রে বর্তমানে দেশের চাকরির বাজারের ওপর নির্ভর করে বেশ কিছু চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে অথবা কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে একজন ছাত্র খুব অল্প সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আয় করতে পারে। তাছাড়া একজন ছাত্র কাজের ওপর জোর দিয়ে আরো বেশি পরিমাণ অর্থ আয় করতে পারে।

অতীতে ছাত্ররা টিউশন এর উপরে নির্ভর করে তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিল এবং পরিবারকে সহায়তা করতে পারছিল। কিন্তু বর্তমানে কোচিং চালু হওয়ার জন্য টিউশনি করে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালানোটা একটু দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। সেজন্য একজন শিক্ষার্থী যখন অনার্স পর্যায়ে পড়াশোনা করতে আসে বা মাস্টার্স পর্যায়ে পড়াশোনা করে তখন সে চাই তার কিছু অর্থ রোজগারের জায়গা থাকলে সে তার লেখাপড়া সুন্দর ভাবে চালিয়ে যেতে পারতো। আর্থিক যে প্রয়োজনীয়তা সেটা লাঘব করতে পারত।

সেই জন্য ছাত্র জীবনে কিছু কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো করে একজন শিক্ষার্থী অথবা ছাত্র তার প্রয়োজনীয় অর্থ রোজগার করতে পারবে এবং চাইলে প্রয়োজনের বেশি অর্থ রোজগার করতে পারবে। আমাদের ওয়েবসাইটে আজকে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

কম্পিউটার, ল্যাপটপ অথবা ফোনের মাধ্যমে অনলাইনে যে সকল কাজ রয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে কিভাবে অর্থ আয় করা যায় সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করার পাশাপাশি অফলাইনে কিভাবে আয় করা যায় তা জানাবো। অর্থাৎ সরাসরি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে স্বল্প সময়ে পার্টটাইম চাকরি করে কিভাবে আয় করা যায় তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

তবে প্রিয় ভিজিটর, কর্মক্ষেত্র খুঁজে নেওয়ার দায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনার উপর বর্তাবে। আপনার দক্ষতা অনুযায়ী এবং কাজের গতিশীলতা অনুযায়ী আপনি নীচের উল্লেখিত যে কোন সেক্টরে পার্টটাইম চাকরি নিতে পারেন। পার্টটাইম চাকরি নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনারা আপনার নিকটস্থ কোনো মাধ্যম ব্যবহার করবেন।

তাছাড়া বিশ্বস্ত লোক দ্বারা পার্টটাইম চাকরির ব্যবস্থা করলে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ খুব কম থাকে। তাই আপনারা নিচের উল্লেখিত পার্টটাইম চাকরির মাধ্যম গুলো ভালো মত পড়েন। আর আপনার চাহিদা অনুযায়ী এবং দক্ষতা অনুযায়ী যেকোনো একটিকে পার্টটাইম চাকরি হিসেবে বেছে নিন।

ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যাসিস্ট্যান্ট

বর্তমান সময়ে প্রত্যেকটি মানুষ অনলাইননির্ভর হওয়ার কারণে অনলাইনেই অবাধ বিচরণ করে। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিষয়টা যদি আপনি বুঝে থাকেন তাহলে এটিকে আপনি পার্টটাইম চাকরি হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন ডিজিটাল মার্কেট অর্থাৎ বিভিন্ন ডিজেল কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনার ইন্সট্রাগ্রাম অথবা ইউটিউব ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবহার করে এবং ফ্রেন্ডলিস্টের বন্ধুদেরকে মাধ্যম ব্যবহার করে নির্দিষ্ট একটি পণ্যের যদি প্রচার করেন এবং সেই পণ্য হাইলাইট করতে পারেন, তাহলে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে আপনি এই পার্টটাইম চাকুরীতে যোগদান করতে পারেন।

অনুবাদ এবং প্রুফ রিডার

আপনার যদি ইংরেজি বিষয়ে যথেষ্ট পরিমাণে দক্ষতা থাকে থাকে তাহলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন ধরনের বই অনুবাদ করতে পারবেন। তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আপনি নির্দিষ্ট একটি বই নির্দিষ্ট সময় ধরে অর্থাৎ আপনার সুবিধা অনুযায়ী বইটি অনুবাদ করতে পারেন। তার জন্য আপনি একটি সম্মানী পেয়ে যাবেন।

এই সম্মানটা অবশ্যই অর্থের দিক থেকে অনেক বেশি হবে। তাছাড়া আপনার যদি ভাষা জ্ঞান, শব্দ ভান্ডার, বাক্যের ওপরে দক্ষতা এবং ব্যাকরণগত দক্ষতা থেকে থাকে তাহলে আপনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো ফিটারের কাজ করতে পারেন। এক্ষেত্রে একজন অনুবাদককে এবং প্রকৃতির কে যথেষ্ট পরিমাণে সম্মানী প্রদান করা হয়ে থাকে।

ট্যুর গাইড

আপনার এলাকায় যদি নির্দিষ্ট কোন পর্যটন এলাকা এবং ভ্রমণের জায়গা থেকে থাকে, তাহলে এলাকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ট্যুর গাইড হিসেবে কাজ করতে। টুরিস্ট যখন আপনাদের এলাকায় ভ্রমণ করতে আসবে, তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণ সাপেক্ষে ট্যুরিস্টদের বিভিন্ন গাইড প্রদান করতে পারেন এবং সেই স্থানের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য তুলে ধরতে পারেন। এভাবে কাজ করলে আপনি স্বল্প সময়ে একটি যথেষ্ট সম্মান পেয়ে যাবেন।

বিদেশি ভাষার ট্রেনিং প্রদান

বর্তমান সময়ে মানুষের ইমিগ্র্যান্ট হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি শিক্ষা গ্রহণ করতে এবং অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে মানুষ বিদেশে গিয়ে স্থায়ী বাসিন্দা হতে চাচ্ছে। সেই অনুযায়ী বর্তমানে দেশে যে ভাষার চাহিদা রয়েছে সে ভাষার ওপর যদি আপনার দক্ষতা থাকে তাহলে আপনি একজন ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রেনার হিসেবে কাজ করতে পারেন।

এক্ষেত্রে আপনি খুবই স্বল্প সময়ে ভালো টাকা আয় করতে পারবেন। তাছাড়া অনেক সময়ই বায়িং হাউসে এবং অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রে বিদেশি ভাষার উপর দক্ষতার উপর নির্ভর করে লোকবল নিয়োগ দিয়ে থাকে। তাই আপনার যদি বিদেশী ভাষা জানা থাকে তাহলে পার্টটাইম চাকরি পাওয়াটা আপনার জন্য খুবই সহজ হবে।

ওয়েটার

অনেকে হয়তো ভেবে থাকছেন যে ছাত্র অবস্থায় একজন ওয়েটারের কাজ করবেন। কিন্তু অন্যকে দেশে দিকে তাকালে আপনি এই লজ্জা আর করতে পারবেন না। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা ছুটির সময় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে হিসেবে কাজ করে।

যেহেতু আমাদের দেশে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেহেতু আপনি বিভিন্ন শিফটে সেখানে পার্ট টাইম চাকরি করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে খুব কম কাজ করতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করে হ্যান্ডসাম স্যালারি পেয়ে যেতে পারেন। এই চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি আপনার সিভি জমা দেন আপনার নিকটস্থ কোনো রেস্টুরেন্টে।

ড্রাইভার এবং ডিসপ্যাচ এজেন্ট

বর্তমান সময়ে অ্যাপসের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিং প্রথা খুব চালু হয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনি নির্দিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কাছে সিভি জমা দিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানে থেকে গাড়ি ধার নিতে পারেন। তারপরে সেই গাড়ি দিয়ে আপনি আপনার গ্রাহকদের সেবা প্রদান করে অল্প সময়ে ভালো আয় করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকার পাশাপাশি গাড়ি চালানোর দক্ষতা থাকতে হবে। তাছাড়া বর্তমান সময়ে আপনারা বিভিন্ন এপস এর মাধ্যমে পণ্যের যে ডেলিভারি করা হয়ে থাকে, সেই ডেলিভারি বয় হিসেবে কাজ করতে পারেন।

সেলস অ্যাসিস্ট্যান্ট

সাধারণত বড় কোন শোরুমে কাস্টমারদের সঙ্গে সুন্দর ভাষায় কথা বলে প্রভাবিত করাই হচ্ছে সেলস অ্যাসিস্ট্যান্ট এর কাজ। আপনি যদি একজন ক্রেতার মনোযোগ আকর্ষণ করে পণ্যটি সম্পর্কে সুন্দর সুন্দর কথা বলে পণ্যটির গুনগতমান তুলে ধরে বিক্রি করতে পারেন, তাহলে আপনি এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। তার জন্য আপনারা ব্র্যান্ডিংয়ের শোরুমে যোগাযোগ করে সিভি ড্রপ করে এই চাকরিতে প্রবেশ করতে পারেন।

এখন আমরা আলোচনা করবো ঘরে বসে কিভাবে পার্টি কাজগুলো করা যায়। তার জন্য আপনার যদি কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ এবং উচ্চগতিসম্পন্ন হ্যান্ডসেট থেকে থাকে, তাহলে আপনারা ঘরে বসে এ কাজগুলো করতে পারবেন। একাজগুলো মূলত অনলাইন ভিত্তিক কাজ। তার জন্য আপনাদের অনলাইনের প্রতি অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

ব্লগিং

এক্ষেত্রে আপনাদেরকে ওয়েবসাইট খুলতে হবে। একজন মানুষ কী চাই এবং আপনি কোন ক্যাটাগরিতে কাজ করতে আগ্রহী সেই বিষয়ে ভিন্নধর্মী এবং ইনফরমেটিভ পোস্ট লিখতে পারবেন। সে সকল পোষ্ট আপনার ওয়েবসাইটে যদি পোস্ট করেন তাহলে যখন ভিজিটর এসে আপনার এই পোস্টটি পড়বে এবং এড এর ওপরে ক্লিক করবে, তখন আপনার সে ক্ষেত্রে আয় হবে।

তবে এ ক্ষেত্রে আপনারা ওয়েব সাইট সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের কোর্সে অংশগ্রহণ করতে পারেন এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। এ ধরনের কাজে প্রবেশ করলে আপনাকে প্রচুর পরিমাণ ট্যালেন্ট হতে হবে এবং টেকনিক্যাল বিষয়গুলো জানতে হবে।

ইউটিউব

বর্তমান সময়ে আপনার যদি একটি ভাল মানের ক্যামেরা থাকে, তাহলে আপনি যে কাজের উপরে দক্ষ এবং একজন মানুষের যে বিষয়ের প্রতি চাহিদা রয়েছে, সেই বিষয়টি প্রকাশ করে ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করতে পারেন। যেহেতু এক্ষেত্রে এডসেন্স এর উপরে আপনার ইনকাম হবে , সেহেতু আপনার ভিডিওর ভিউ বাড়তে হবে।

তাই জনগণ কি চাই এবং কোন ধরনের ভিডিও ইউটিউবে এসে দেখে সে বিষয় সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। আপনার উপস্থিত বুদ্ধি এবং অভিজ্ঞতা খাঁটি আপনি ইউটিউব থেকে মাসে অনেক টাকা ইনকাম করতে সক্ষম হবেন।

কনটেন্ট রাইটার

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মালিক অভিজ্ঞ কনটেন্ট রাইটার খুঁজে থাকেন। অর্থাৎ আপনাকে নির্দিষ্ট টপিক প্রদান করলে আপনি সেইটা অফিসের ওপরে কনটেন্ট লিখে দিতে পারেন এমন যোগ্যতা থাকতে হবে। তবে বর্তমান সময়ে ইংরেজি কনটেন্ট এর চাহিদা খুবই বেশি। তাছাড়া আপনি বাংলা কন্টেন্ট লিখেও ভালো আয় করতে পারবেন।

এ ধরনের কাজের একটা সুবিধা হলো ঘরে বসে আপনি যে কোন সময় আপনার সুবিধামতো কনটেন্ট লিখে আয় করতে পারবেন। তাই এই কাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে থাকলে আপনারা ওয়েবসাইটের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

 

ইমেজ সেলিং

আপনার ভালো মানের ক্যামেরা দিয়ে প্রকৃতির এবং আপনার আশেপাশের সুন্দর এবং মনোরম ছবি তুলে আপনারা বিভিন্ন সাইটে বিক্রি করে খুব সহজে টাকা আয় করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার অভিজ্ঞতা এবং ছবি এডিট করার অভিজ্ঞতা বেশি কাজে লাগবে।

উপরে উল্লেখিত মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে আপনারা ঘরে বসে অথবা ঘরের বাইরে গিয়ে স্বল্প সময়ে পার্টটাইম কাজ করতে পারবেন। তবে মানুষের জীবনে দুঃসময়ে সে থাকে এবং সে দুঃসময়ে মানুষ বিভিন্ন মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে টাকা রোজগার করে থাকে। আপনার জীবনে চলার পথে আপনি সফল হন এই কামনা করছি এবং উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন মাধ্যম গ্রহণ করে আপনারা পার্টটাইম চাকরি তে অংশগ্রহণ করতে পারেন। উপরে উল্লেখিত কাজগুলোতে অনুসরণ করলে আপনারা পার্টটাইম চাকরি করার পাশাপাশি নিয়মিতভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবেন। সেই জন্য আপনি যে কাজে দক্ষ তার ওপরে আরো দক্ষতা বৃদ্ধি করুন।

One thought on “ছাত্রজীবনে পার্ট টাইম চাকরি ২০২৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *